তালায় হাসুয়ার আঘাতে মাদকাসক্ত ছেলের মৃত্যু, গ্রেপ্তার মায়ের আদালতে জবানবন্ধি

Date:

Share:

তালা প্রতিনিধিঃ
তালা উপজেলার আটারই গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে মাদকাসক্ত মো. হাবিবুর মোড়ল (৩০) নামে এক যুবককে হাসুয়া দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে। নিহত হাবিবুর তালার আটারই গ্রামের আব্দুল্লাহ মোড়লের ছেলে এবং পেশায় একজন ভ্যানচালক। এ ঘটনায় নিহতর স্ত্রী শান্তা খাতুন বাদী হয়ে তালা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলার আটারই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তালা থানার পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং পারুল বেগমকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের মাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন তালা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত পারুল বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোটরসাইকেল কেনা নিয়ে স্ত্রী শান্তা খাতুন ও মা পারুল বেগমের সঙ্গে হাবিবুরের বাগ্বিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়।

নিহতের স্ত্রী শান্তা খাতুন বলেন, আমার স্বামী মাদকাসক্ত। প্রায়ই মাদক সেবন করে আমাকে ও শাশুড়িকে মারধর করত। মোটরসাইকেল কেনার জন্য চাপ দিত। সোমবার রাতে সে আবারও টাকা চেয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমি বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারধর করে। এতে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি সে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’

নিহতের মা পরুল বেগম আদলতের জবানবন্ধিতে বলেন, দুই বছর আগে দক্ষিণ আটারই গ্রামের শান্তা খাতুনের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তাদের ১০ মাসের একটি শিশু সন্তান আছে। তার ছেলে নেশা করে এসে বউ ও মায়ের সাথে ঝগড়া,মারামারি,অশ্লিন ভাষায় গালিগালাজ করে। যার কারনে আগেও দুটো বউ চলে গেছে হাবিবুরের। ঘটনার দিনমেয়ে সুমাইয়াকে খর্ণিয়াতে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে জন মুজুর খেটে দিন চালান তিনি। তার ছেলে ভ্যানচালক হাবিবুর রহমান একজন মাদকাসক্ত। এক বছর আগে ছেলে হাবিবুর রহমান তার গলায় দা ঠেকিয়ে ১৪ শতক জমি এক লাখ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করে। নেশা করে সে ওই টাকা নষ্ট করার পর তার কাছ থেকে মটর সাইকেল নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলো। রাতে মায়ের সাথে বাইক কিনে দিতে বলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে পাশে সিঁড়ির উপর থাকা হাসু(কাস্তে) দিয়ে মাকে কোপ দেওয়ার সময় হাতাহাতিতে সেই কোপ তার গায়ে ও মাথায় লাগে। এর ফলে সে মারা যায়। তার মায়ের বক্তব্য আর কেউ এই ঘটনায় দ্বায়ী নয়, তার ছেলে একজন নেশাখোর, তার মাথা ঠিক থাকেনা ঝগড়া মারামারি করে বলে অন্য কেউ তেমন তাদের বাড়িতে আসেনা।

এলাকাবাসীর দাবি, হাবিবুর মাদকাসক্ত ছিলেন এবং প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর কপাল ও গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল।

তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্ত্রী শান্তা খাতুন বাদী হয়ে শাশুড়ীকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন মামলা নং-১১,তারিখ-২২/০৭/২৫। গ্রেপ্তার পারুল বেগমকে মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলত জবানবন্ধি দিয়েছেন।