এম আজাদ হোসেন কপিলমুনি:ডিম লাগবে কারও ডিম—? একেবারেই সস্তা দিচ্ছি ১৩ আর ১৬ টাকায়, আজই আনা, একদম টাটকা ডিম। ডিম লাগবে কারও ডিম—? এভাবেই হাক ছেড়ে গতকাল দুপুরে কপিলমুনির সোনাপট্টিতে ডিম বিক্রি করছিলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা ছবিরন বিবি।
পরনের পুরাতন বোরখা, হাতে তার ডিমের ২টা ঝুলি, দু’পায়ে আধোছেড়া স্যান্ডেল, মাথায় অর্ধেকের বেশি চুল পেকে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। শরীরের মেরুদন্ড যৌবন কালের মতো দীর্ঘ শক্ত বা সোজা নেই, মেরুদন্ড বেকে নুয়ে গেছে। বয়সের ভরে নুজ্জ ছবিরন জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও দারিদ্রতার কাছে পরাজয় মানেননি। অভাব অনাটনের মধ্যদিয়ে জীবনের চাকা ঘুরলেও কখনো কারো দ্বারে যাননি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। বলা চলে জীবন যুদ্ধে তিনি অকুতোভয়, অভাব নিত্য সঙ্গী হওয়ায় প্রতিনিয়ত রুটি-রুজির সন্ধানে ছুটতে হয় তাকে। বার্ধক্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডিমের ঝুলি নিয়ে ছুটে চলেন কপিলমুনি অঞ্চলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কপিলমুনির পাশর্^বর্তী মাছিয়াড়া গ্রামের মৃত ছানা মোল্লার স্ত্রী তিনি। ২ ছেলে ও ৭ মেয়ে জননী তিনি। এক ছেলে কয়েক বছর আগে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বাড়ীতে একটি টিন শেডের বারান্দায় বসবাস করেন তিনি।
স্বামী মারার যাওয়ার ৩ বছর পর থেকে তিনি ডিম বিক্রি করে রুজির সন্ধান করে থাকেন। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে প্রত্যন্ত গ্রামে চলেন যান তিনি, সেখান থেকে দেশি মুরগী ও হাঁসের ডিম ক্রয় করে কপিলমুনিসহ পাশর্^বর্তী হাট বাজারে গিয়ে ঝুলিতে করে দোকানে দোকানে বিক্রি করেন তিনি। দেশী মুরগীর প্রতি পিস ডিম ১৩ আর হাঁসের প্রতি পিস ডিম ১৬ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতি ডিমে মাত্র ৫০ পয়সা লাভ করেন ছবিরন, আর এই লাভের অর্থ দিয়েই তিন বেলা ভাত জোটে তার। দীর্ঘ দিন এমন অসহায়ত্বের মধ্যে দিন রাত কাটালেও সরকারী ভাবে কোন সহায়তা আজও জুটেনি তার ভাগ্যে।
ছবিরন বিবির একজন নিয়মিত খরিদ্দার রফিকুল গাজী বলেন, উনি বৃদ্ধা মানুষ, এ বয়সেও ডিম বিক্রি করে উপার্জন করেন, খুবই কষ্ট করেন, আমি প্রায়ই তার কাছ থেকে ডিম ক্রয় করি।
এবিষয়ে ছবিরন বিবি বলেন, আমি গরীব মানুষ, বয়স হয়েছে, আমার স্বামী নেই, পেটের দায় প্রতিদিন ছুটি গ্রাম থেকে শহরে। ডিম বেচি, যা লাভ হয় তাই দিয়েই চলে আমার একার সংসার। আমি কতটা কষ্টে দিন কাটাই সেটা বলার মতোন না, কিন্তু সরকারী কোন সাহায্য পাই না।
