তালা প্রতিনিধিঃ
উজানের পানি ও নরনিয়া-ভদ্রা নদী ভরাট হওয়ায় সাতক্ষীরার তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে এই এলাকার ৫ হাজার পানিবন্ধী মানুষ। এমনকি মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানাগেছে, শুক্রবার (১৫ আগষ্ট) তালা উপজেলার পাঁচরোখী গ্রামে এমন বেদনাদায়ক করুন পরিস্থিতি দেখা গেছে। এই গ্রামের গ্রাম ডা: শহিদুল ইসলাম এর পিতা আব্দুস সোবহান শেখ (৮০) মৃত্যুবরণ করেছেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দীর্ঘদিন পানিবন্ধী থাকায় পিতার মৃত্যু দেহ দাফন করা সম্ভব হচ্ছে না পারিবারিক কবরস্থানে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের কেউ মারা গেলে তার মৃত্যু দেহ দাফন করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কোন জেলায় বা উপজেলাতে। গত বছরের মতো এবারো অনেকটাই আগে ভাগে বন্যা ও ভিন্ন জেলা থেকে ধেয়ে আসা উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক এই আব্দুস সোবহান শেখ এর মৃত্যের পর মরদেহ দাফনের অনিশ্চিত দেখা দিলে সকলের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আরশনগর গ্রামে আত্নীয়ের কবরস্থানে দাফনের পরামর্শ দিলে বেঁকে বসেন মৃত ব্যক্তির গ্রাম ডাঃ পুত্র শহিদুল ইসলাম ! সর্বশেষ বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে পিতার মৃত্যু দেহ দাফন এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্য মতে, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার উজান পানি প্রবাহিত হয়ে তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে প্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত। প্রতিবছর ৬ মাস পানিবন্দি তালার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নটি। উজানে পানিতে ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে উঠেছে বেড়েছে পানিবাহিত রোগ ও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ৬ মাসতলিয়ে থাকে ফসলি জমি উৎপাদন হয়না কোন ফসল। এই ইউনিয়নের গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি রয়েছে জলমগ্ন। রাস্তাঘাট, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই পানির নিচে। এতে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। এক অনিশ্চিত জীবন যাত্রার অসহায় হয়ে জীবন যাপন করছে এই এলাকার মানুষ। তালা উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য ইনিয়নের নাম তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন। অভিশপ্ত এই ইউনিয়নবাসিকে রক্ষা করতে হলে নিতে হবে মেগা প্রকল্প।
শিরাশুনি গ্রামের গুলশানা আরা খাতুন বলেন, অতিবৃষ্টির সঙ্গে উজান পানি মিলিয়ে হঠাৎ করেই আমাদের গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। রান্নাবান্না, কৃষিকাজ, শিশুদের পড়াশোনা সব কিছুতেই ভোগান্তি। একই গ্রামের মজিবার রহমান শেখ বলেন, গত তিন বছর ধরে এই পানি আমাদের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। সাংবাদিক ও এনজিওরা আসেন কথা বলেন কিন্তু সমাধান কিছুই হয় না। কৃষিকাজ বন্ধ কাজ নেই ঘর থেকেও বের হতে পারি না। স্থানীয় ময়না বেগম বলেন, আমাদের বাড়িতে কোমর সমান পানি। কেউ মারা গেলে কবরস্থানে নেওয়াও সম্ভব হবে না।
কেন্দ্রীয় জেএসডির নেতা মীর জিল্লুর রহমান জানান, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কেশবপুরের নরনিয়া খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানির নিষ্কাশনের গতিবেগ বাড়াতে বিভিন্ন খালের মুখে থাকা নেটপাটা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হয়েছে। তবে কেশবপুরের উজান পানি না সরালে আশপাশের আরও ১০টি গ্রাম স্থায়ী জলাবদ্ধতায় পড়বে।
তিনি আরও বলেন, নওয়াপাড়া খাল দিয়ে কিছুটা পানি সরানো গেলেও নরনিয়া খাল ও ভদ্রা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনে বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কেশবপুর ও মনিরামপুরের পানি ভদ্রায় না পড়ে আমাদের এলাকায় পড়ে জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে। ভদ্রা নদী খনন করলেই স্থায়ী সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিস দীপা রাণী সরকার বলেন, উপজেলার অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। ইতোমধ্যে কয়েকটি খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হয়েছে। আমি নিজেও একাধিকবার এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত পানি অপসারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সকলকে সঙ্গে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
