তালা প্রতিনিধি
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত নানা আয়োজনে মুখর ছিল তালা উপজেলার ১৯৩ টি পূজা মণ্ডপ। বিজয়া দশমীর দিন তালা কপোতাক্ষ নদের তীরে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় প্রতিমা বিসর্জন। নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভক্তদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দ ও আবেগের মিশেল, অনেকের চোখে জলও দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবার) বিকালে তালা সদরের মেলা বাজার ভাঙনকূলের কপোতাক্ষ নদ,পাটকেলঘাটার কপোতাক্ষ নদেরঘাটস্থ এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর আগে মন্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। বিসর্জনকে ঘিরে সাজানো হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা। বিসর্জনকে ঘিরে সাজানো হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা। তালা বাজারের ভাঙ্গনকূল এলাকার সড়কজুড়ে বসে শতাধিক দোকান। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষে মেতে ওঠে মেলায় কেনাকাটার উচ্ছ্বাসে। মেলায় চুড়ি, রঙিন ফিতা, কানের দুল, কাঁচের অলঙ্কার, প্রসাধনী সামগ্রী, মাটির খেলনা, রান্নাঘরের সামগ্রী, ঝিনুক, মিষ্টি ও বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুডের দোকান সাজানো হয়। এছাড়াও নাগরদোলা, খেলনার গাড়ি, বেলুন আর পুতুলের দোকান ছিল শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক দীপা রানী সরকার,উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রাহাত খান, সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য,বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও এমপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতে ইসলাম মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, তালা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মাইন উদ্দীন,পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান, তালা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি বাবু মৃণাল কান্তি রায়,তালা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম শফি, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আলহাজ্ব ডাঃ মাহামুদুল হক,তালা উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর মাওলানা মফিদুল ইসলাম,তালা প্রসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক এস.এম নজরুল ইসলাম নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পূজা মন্ডপ পরিদর্শনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও আনসার সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার বলায় তৈরী করে রেখেছিলেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বসা এই মৌসুমী মেলাকে ঘিরে তাদের ভালো আয় হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে জমজমাট বিক্রি। বিশেষ করে বিসর্জনের দিন ভিড় থাকে উপচে পড়া।
এ প্রসঙ্গে তালা উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সাধারন সম্পাদক নারায়ন মজুমদার জানান, দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এখন গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি বড় উৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের দিনকে ঘিরে প্রতি বছর মেলা বসে, যা মানুষকে আনন্দ দেয় এবং স্থানীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে তোলে।
তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দীন ও পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান জানান, প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্নে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সরকারী নির্দেশনা মোতবেক এবার সন্ধ্যা ৭-৮ টার মধ্য প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সকল পূজা মণ্ডপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে প্রতিমা বিসর্জন ও মেলার কারণে তালার গ্রামীণ পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এই মেলা গ্রামীণ সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করে।
